ভাষ্য : সম্মিলিত কণ্ঠে অাওয়াজ উঠুক প্রতারকদের জবাব চাই

২১ জানুয়ারী ২০১৬ শহীদ মিনার চলুন

প্রিয় সাথী,

এই নিয়ে বেশ কয়েকবার জাঁকজমক করে এ রাজ্যে শিল্পের হাল ফেরাতে শিল্পপতিদের শীর্ষ সম্মেলন হয়ে গেল। রাজ্য কোষাগারের দেউলিয়া অবস্থা থাকলেও জাঁকজমকে কোনো ফাঁক ছিল না। অনেকটা উৎসব উৎসব ভাব, প্রচুর ‘প্রস্তাব’ জমা পড়লো – বড় বড় অঙ্কের টাকা (পুঁজি) বিনিয়োগের প্রস্তাব। মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, ‘এত প্রস্তাব পুরোটা হিসাব করে ওঠা যায়নি’। কিন্তু অামরা বন্ধ-রুগ্ন কলকারখানা পুনরুজ্জীবনের যে ‘প্রতিশ্রুতি’ পেয়েছিলাম, তাতে কোনো পুঁজি বিনিয়োগের কথা তো শুনলাম না । ৫০ হাজারের বেশি বন্ধ-রুগ্ন শিল্পগুলো বাঁচানোর কথা কি মুখ্যমন্ত্রী ভুলে গেলেন? উত্তরবাংলার চা-শ্রমিকদের অনাহারে মৃত্যু-মিছিল নিয়ে শিল্প সম্মেলনে কোনো কথা হল কি? পশ্চিমবাংলায় অালোড়ন তোলা ‘সিঙ্গুর’ নিয়ে কি কিছু কথা হল? তাঁত-শিল্প, পাট-শিল্প নিয়ে তো কোনো কথাই শুনলাম না। কেউ কেউ বলছেন, অাজকের যুগে ওসব মান্ধাতা অামলের শিল্প নিয়ে কথা বলার কি অাছে? অাগে ‘অাধুনিক’ সব শিল্প হোক, উন্নয়ন হোক, ‘চুঁইয়ে চুঁইয়ে ‘ সে উন্নয়নের ‘সুফল’ একদম নীচুতলায় পৌঁছে যাবে। ৬০ বছরের বেশি সময় ধরে এই ‘উন্নয়ন তত্ত্ব’ বুদ্ধিমান মানুষেরা অামাদের শুনিয়ে এসেছেন। অাম্বানি-অাদানি-টাটা-বিড়লাদের পাহাড় প্রমাণ মুনাফা বাড়াতে সাহায্য করলেও এই ‘উন্নয়ন তত্ত্বে’ অামাদের কথা কে ভাবে? চাকরি বা কর্মসংস্থান কত হবে – এ প্রশ্ন তোলা নাকি সেকেলে ব্যাপার। তোমরা চাষের জমি দিয়ে দাও, উন্নয়নের জন্য লাগবে! অার ওদিকে ১০-১৫-২০ বছর ধরে শহর ও শহরতলিতে যে ‘প্রাইম ল্যান্ড’ বন্ধ-রুগ্ন কারখানার কঙ্কালগুলো ধরে রাখার জন্য পড়ে অাছে, তার উদ্ধার কেন হল না, অাদৌ হবে কিনা, এ নিয়ে শিল্পপতিরা বা তাদের মুখপাত্ররা শিল্প-সম্মেলনে কিছু বললেন কি? জানা গেল না। দেশের অাইন-কানুনকে তোয়াক্কা না করে যে শিল্পপতিরা ও তাদের বন্ধুবর্গ মজুরি-পি এফ-গ্র্যাচুইটি-ই এস অাই-এর কোটি কোটি টাকা তছরূপ করলো তাদের গ্রেপ্তার বা শাস্তির ব্যাপারে শিল্প-সম্মেলনে মুখ্যমন্ত্রী কোনো ‘প্রস্তাব’ পেশ করলেন কি?। এমন অলক্ষুণে কথা অবশ্য শোনা যায়নি!!

শিল্প-সম্মেলন মিটতে না মিটতেই ‘শিল্পের জন্য পদযাত্রা’ শুরু হবে – সিঙ্গুর থেকে শালবনী। যারা ক্ষমতায় অাসতে উদগ্রীব হয়ে পড়েছে তারা ক্ষমতায় ফিরলে সিঙ্গুরে কারখানা হবে, শালবনীতে বড় ইস্পাত কারখানা হবে – নেড়া এভাবেই বার বার বেলতলায় যায়। শিল্পপতিদের সেবায় জান লড়িয়ে দেয়। দাবার ঘুঁটি হয় বেকার যুবক -যুবতীরা। তবে অবশ্য তারা জানিয়েছেন, ‘একা তো ক্ষমতায় ফেরা যাবে না’ – তাই কংগ্রেস সহ সমস্ত ‘ধর্মনিরপেক্ষ’ শক্তির উচিত তাঁদের সাথে জোট বাঁধা। কংগ্রেস নয়া উদারনীতির রূপকার, বড় বড় বুর্জোয়া-জমিদারদের দল, সুযোগ পেলেই অামেরিকার দালালি করে (যেমন অ-সামরিক পরমাণু চুক্তির সময় করেছিল) ইত্যাদি কথাবার্তা নাকি এখন ভুলে যাওয়াই ভালো – ওসব কথা ‘বাম ঐক্যের’ জন্য বলতে হয়, ক্ষমতায় ফেরার জন্য নয়।

সরকারী ‘ওরা’ এখন ডিজিটাল রেশন কার্ড বিলি করে গ্রাম-গ্রামান্তরে হৈ চৈ ফেলে দিয়েছে — ২ টাকায় চাল পাওয়া যাবে। কিন্তু ২ টাকাই হোক, অার এক টাকা — গ্রামাঞ্চলে তো কাজ বন্ধ। কাজ করলেও মজুরি মেলে না। চাষের অবস্থাও তো সঙ্গীণ – অাত্মহত্যার হিড়িক পড়ে গেছে। যা হোক ডিজিটাল কার্ড তো পাওয়া যাবে। ১৮ রকমের কার্ড – রেশনকার্ড, অাধার কার্ড, বিপিএল কার্ড, অন্ত্যোদয় কার্ড, স্মার্ট কার্ড, এ টি এম কার্ড – কার্ড নিয়ে অাপাতত লাইনে দাঁড়াতে হবে, ভোট পর্যন্ত। ভোট মিটলে কোনো কার্ডই কাজে লাগবে না।

এ খেলা চলতেই থাকবে। যদি না অামরা রুখে দাঁড়াই, গ্রাম-শহরে অাধপেটা খাওয়া গরিব মানুষরা বা শহর-গ্রামের বেকার যুবক-যুবতীরা। কাজ তো অনেক হবে বলে শুনলাম – ‘সুদিন’ ফিরলো কি?

ওসব ওরা ভোটের জন্য বলে – ভোট মিটলেই ভুলে যায়। অামরা বরং জোট বাঁধি, রাস্তায় হাঁটি, জোরে অাওয়াজ তুলি – প্রতারক ও বিশ্বাসঘাতকদের ক্ষমা নেই, প্রতারণার জবাব চাই।

সি পি অাই (এম এল) লিবারেশন

পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কমিটি

Back-to-previous-article
Top