১৮ জানুয়ারী ২০১৬ পার্টির রাজ্য অফিসে সাংবাদিক বৈঠকে রাজ্য সম্পাদক পার্থ ঘোষ ও পলিটব্যুরো সদস্য কার্তিক পালের প্রেস বিবৃতি

১। ঐক্যবদ্ধ বাম-গণতান্ত্রিক অান্দোলনে পরিকল্পিত অন্তর্ঘাত (সাবোতাজ)


বিগত দেড় বছরে বিশেষত কেন্দ্রে বিজেপি-অার এস এস পরিচালিত নরেন্দ্র মোদী সরকার ক্ষমতায় অাসার পর দেশজুড়ে ৬টি বামপন্থী সংগঠন কর্পোরেট-সাম্প্রদায়িক ফ্যাসিস্ট হামলা ও সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী ঐক্যবদ্ধ কর্মসূচী গ্রহণ করে। পশ্চিমবাংলায় ৬টি বামপন্থী দলের সাথে যৌথভাবে অার‍ও কিছু সংগঠন (যা সংবাদ মাধ্যমে বামপন্থী দলগুলোর যৌথ কার্যক্রম হিসাবে পরিচিতি পেয়েছে) গণতন্ত্রের ওপর হামলা, সাম্প্রদায়িক বিভাজনের রাজনীতি, জনজীবনের বুনিয়াদী বিভিন্ন ইস্যুতে ঐক্যবদ্ধ বামপন্থী গণতান্ত্রিক অান্দোলন চালিয়ে যাচ্ছিল। ২ সেপ্টেম্বরের সারা ভারত সাধারণ ধর্মঘটের সমর্থনে বামপন্থী দলগুলো যৌথ কর্মসূচী গ্রহণ করে। এই সমস্ত কর্মসূচীতে দক্ষিণপন্থী কংগ্রেস বা বিজেপিকে অাহ্বানের কোনো প্রশ্নই ছিল না। স্বাভাবিকভাবেই রাজ্যের তৃণমূল সরকারের বিরুদ্ধে প্রচার চালানো হয়। সি পি এমের ২১তম পার্টি-কংগ্রেসও বিজেপি-কংগ্রেসের বিরুদ্ধে বিরোধিতার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। অাজ হঠাৎ নির্বাচনের মুখে এসে কি এমন ‘অস্বাভাবিক’ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে যে ঐক্যবদ্ধ বাম-গণতান্ত্রিক অান্দোলনকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার পরিবর্তে বামপন্থী অান্দোলনের অভ্যন্তর থেকে স্বার্থান্বেষী অংশ কংগ্রেসের প্রতি প্রকাশ্য অাহ্বান জানাচ্ছে ”কংগ্রেস কোন দিকে জানাক”। পার্টি-কংগ্রেসের সিদ্ধান্তের থেকেও কংগ্রেস দলের সিদ্ধান্ত ঐ স্বার্থান্বেষী অংশের কাছে বেশি গ্রহণযোগ্য ও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠল? কংগ্রেস কোন দিকে এটা অজানা প্রশ্ন নয় – কংগ্রেস পুঁজির দিকে, দুর্নীতির দিকে, জনবিরোধী কার্যকলাপের দিকে। এহেন কংগ্রেসের সঙ্গে রাজনৈতিক সমঝোতা ও নির্বাচনী অাঁতাত বামপন্থী অান্দোলনকে কলুষিত করবে এবং প্রকারান্তরে তৃণমূল কংগ্রেসের হাতকেই শক্তিশালী করবে। অামরা রাজ্যের সমস্ত সংগ্রামী বামপন্থী শক্তির কাছে প্রকাশ্যে অাহ্বান জানাচ্ছি তৃণমূল কংগ্রেস সরকারের স্বৈরাচার ও স্বেচ্ছাচারের বিরুদ্ধে এবং জনগণের বুনিয়াদী ইস্যুগুলো নিয়ে ঐক্যবদ্ধ বাম-গণতান্ত্রিক অান্দোলন শক্তিশালী করার।

২। সিঙ্গুরের কৃষক জনগণের প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা দুই জমানাতেই অব্যাহত


২০০৬ সাল থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত উর্বরা কৃষিজমি থেকে কৃষক উচ্ছেদ করে তথাকথিত শিল্পায়নের বিরুদ্ধে রাজ্য উত্তাল হয়েছিল। রাজকুমার ভুল খুন এবং তাপসী মালিক ধর্ষিতা ও খুন হয়েছিল। ‘শ্রমিক-কৃষকের সরকার’ শেষপর্যন্ত ভারতের একচেটিয়া পুঁজিপতি টাটা শিল্পগোষ্ঠীর কাছে অাত্মসমর্পণ করেছিল। জোর করে কৃষকদের উচ্ছেদ করে শিল্পায়নের পথ ‘ভুল’ ছিল এ অাপ্তবাক্য ততকালীন মুখ্যমন্ত্রী বহু সভা-সমিতিতে অাউড়ে গেছেন। দলীয় সম্মেলন বা পার্টি কংগ্রেসেও এ নিয়ে বিস্তর চর্চা হয়েছে। জাতীয় দলিল শেষপর্যন্ত সিঙ্গুর-নন্দীগ্রাম ইস্যুতে দলের ”জাতীয় পরিচিতি কলুষিত হয়েছে” বলে স্বীকার করে নিয়েছে। অাজ অাবার নির্বাচনের মুখে ‘সিঙ্গুরে ঐ পথেই হাঁটবো’ বলে অাস্ফালন শোনা গেল। অারও একধাপ এগিয়ে সি পি এমের কেন্দ্রীয় কমিটির নেতা ‍ও দলের শ্রমিক ফ্রন্টের দায়িত্বপ্রাপ্ত পাঁচ-ছয় মাস পরে মোটরগাড়ি কারখানা উদ্বোধনের ঘোষণাও করে এলেন। অথচ এরা প্রত্যেকেই জানেন সিঙ্গুর মামলা ভারতের সর্বোচ্চ অাদালতে বিচারাধীন। অাইন-অাদলতেরও কোনো মান্যতা সি পি এম নেতৃত্বের কাছে নেই বলেই মনে হয়।

অন্যদিকে ২০১১ সালে ক্ষমতায় অাসার অাগে তৃণমূল নেত্রী মমতা ব্যানার্জী সিঙ্গুরের অনিচ্ছুক কৃষকদের জমি ফেরত দেওয়ার যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তাকে পরিকল্পিতভাবে অাদালতের ঠাণ্ডা ঘরে পাঠিয়ে দিয়েছেন। জমি ফেরতের কথা মৃদু কণ্ঠে সভা-সমিতিতেই শোনা যায়। সুপ্রীমকোর্টে সিঙ্গুর মামলা নিষ্পত্তির জন্য রাজ্য সরকারের কোনো তৎপরতা নেই। সরকারী অাইনজীবীরা কোন ভূমিকা নিচ্ছেন তাও রাজ্যবাসী জানেন না। টাটার সঙ্গে চুক্তি প্রকাশের যে কথা ছিল তা অরণ্যেই হারিয়ে গেছে। তাপসী মালিকের খুনীরাও কেউ শাস্তি পায়নি। একই ঘটনা নন্দীগ্রাম গণহত্যার প্রশ্নেও দেখা গেল। নির্বাচনী ফয়দার জন্য সিঙ্গুর-নন্দীগ্রাম অান্দোলনকে ব্যবহার করলেও তৃণমূল নেত্রী তথা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী সিঙ্গুর-নন্দীগ্রামের কৃষক জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করেই যাচ্ছেন। রাজ্যের বাম-গণতান্ত্রিক সংগ্রামী জনগণকে সিঙ্গুরের কৃষকদের জমি ফেরতের প্রশ্ন ও নন্দীগ্রাম গণহত্যার বিচারের দাবিতে অাবার পথে নামতে হবে। ২১ জানুয়ারী শহীদ মিনারের ”জবাব চাই সমাবেশ” থেকে সিঙ্গুর-নন্দীগ্রাম প্রশ্নে পরবর্তী কর্মসূচী ঘোষণা করা হবে।

৩। ট্রিগার-হ্যাপী পুলিশ


কোচবিহারের তুফানগঞ্জে ২০০০-এরও বেশি লোকের ভিড়েও গুলি চালাতে পিছপা হল না পুলিশ। ‘রাতভর’ জলসা অনুষ্ঠানে মাইক বাজানো থামাতে স্থানীয় প্রশাসন ও পুলিশ উদ্যোক্তাদের সঙ্গে অালাপ-অালোচনা করে কেন মেটাতে পারলো না। পুলিশের এই গুলিচালনায় ৫ জন গুরুতর অাহত হয়েছে, মহিলা ও শিশুরাও এই অাক্রমণের হাত থেকে রেহাই পায়নি। অামরা পুলিশের এই বর্বরোচিত হামলার তীব্র নিন্দা করি।
Press Release 18 Jan 2016

Back-to-previous-article
Top