রাজ্য অফিসে অনুষ্ঠিত সাংবাদিক বৈঠকে পলিটব্যুরো সদস্য কার্তিক পাল ও রাজ্য সম্পাদক পার্থ ঘোষের বিবৃতি

নন্দীগ্রাম গণহত্যা নিয়ে সি বি অাই-এর অসত্য, উদ্দেশ্য প্রণোদিত, বিকৃত রিপোর্ট বাতিল করতে হবে

নন্দীগ্রাম ও সিঙ্গুরের অান্দোলনকারীদের ওপর থেকে সমস্ত সাজানো ও মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করতে হবে

নন্দীগ্রাম হত্যা ও গণহত্যায় অভিযুক্ত পুলিশ অাধিকারিক, প্রশাসনের কর্তাব্যক্তি ও তৎকালীন শাসক দলের নেতৃবৃন্দের কঠোর শাস্তি চাই

নন্দীগ্রাম ও নেতাই গণহত্যার বিচার বিভাগীয় তদন্তের প্রতিশ্রুতি কোথায় গেল?

নন্দীগ্রামে কেমিক্যাল হাব গড়ার নামে হাজার হাজার একর চাষের জমি গ্রাস অভিযানের বিরুদ্ধে জনগণের প্রতিরোধ শুরু হয়েছিল ৩ জানুয়ারী ২০০৭। ঐ দিনই সি পি এম অাশ্রিত দুষ্কৃতিদের গুলিতে প্রাণ হারিয়েছিল তিন তিনজন কিশোর ও যুবক। জানুয়ারী থেকে ১৪ মার্চ পর্যন্ত লাগাতার পুলিশী মদতে সি পি এমের অধঃপতিত নেতৃবৃন্দের প্রত্যক্ষ তদারকিতে দুষ্কৃতিরা প্রতিবাদরত কৃষক জনগণের ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়া, হামলা সংগঠিত করা, গুলি ও বোমাবাজি চালিয়ে যাওয়া এবং মহিলাদের সঙ্গে অশালীন অাচরণের বহু ঘটনা সংগঠিত হয়েছিল। ১৪ মার্চের পরিকল্পিত পুলিশী অাগ্রাসনের বহু পূর্বেই অাত্মরক্ষার্থে নন্দীগ্রামের অান্দোলনকারীরা রাস্তা-ঘাট কেটে দিয়েছিল, ব্রীজ ভেঙে দিয়েছিল। এছাড়া তাদের কাছে অাক্রমণ প্রতিহত করা ও জমি গ্রাস রোধ করার ভিন্ন কোনো রাস্তা ছিল না। দীর্ঘ তিন মাস ধরে তৎকালীন শাসক দলের নেতৃবৃন্দ বা রাজ্য মন্ত্রীসভার কোনো কর্তাব্যক্তি নন্দীগ্রামের জনগণের সঙ্গে কথাবার্তা বলার জন্য সেখানে যাওয়ার প্রয়োজন বোধ করেননি। ১৪ মার্চ পুলিশ দিয়ে নন্দীগ্রাম মুক্ত করার ষড়যন্ত্র হয়েছিল। তৎকালীন স্বরাষ্ট্রসচিব প্রসাদ রায় ১২ মার্চ ২০০৭ কলকাতায় সাংবাদিক বৈঠক করে এই পুলিশী অভিযানের কথা ঘোষণা করেছিলেন। ৬ মার্চ ২০০৭ মুখ্যমন্ত্রীর প্রকাশিত পুস্তিকায় সমস্যার রাজনৈতিক সমাধানের যে কথাবার্তা ছিল তা ছিল নিতান্তই মুখোশ। ১৪ মার্চ ২০০৭ পুলিশী অভিযান ও গণহত্যা নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টের ঐতিহাসক মন্তব্য ”সম্পূর্ণ অসাংবিধানিক” এবং তৎকালীন রাজ্যপাল মাননীয় গোপালকৃষ্ণ গান্ধীর উক্তি ”হাড় হিম করা পাশবিকতা”, রাজ্যের অাপামর জনসাধারণকে তৎকালীন শাসকের বিরুদ্ধে দাঁড় করিয়ে দিয়েছিল। অাজ যেভাবে বুদ্ধবাবু নেতাই গণহত্যায় ভুল স্বীকার করছেন, সেদিনও বহু টালবাহানার পর নন্দীগ্রামে ভুল হয়েছিল বলে স্বীকার করেছিলেন। শুরু থেকেই অামরা সিঙ্গুর-নন্দীগ্রাম অান্দোলনের সঙ্গে যুক্ত, এবং রাজ্যের অসংখ্য গণতান্ত্রিক বামপন্থী জনগণ, বুদ্ধিজীবী সমাজ, ছাত্র-যুব এই অান্দোলনের প্রতি সহমর্মিতা ও সমর্থন জানিয়েছেন। এই পরিপ্রেক্ষিতেই হাইকোর্টের নির্দেশে সি বি অাই তদন্ত রিপোর্ট হাইকোর্টেরই ঐ ঐতিহাসিক মন্তব্যকে নস্যাৎ করার অপচেষ্টা। সি বি অাই ক্রমশ নিজেকে হাস্যকর এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত সংস্থা হিসাবে দাঁড় করাচ্ছে। প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য ও বিমান বসুরা নন্দীগ্রাম ও সিঙ্গুর অান্দােলন থেকে কোনো শিক্ষা নিতে রাজি নন, তাই সি বি অাই রিপোর্টকে অজুহাত করে এখনও তাঁদের অপরাধ চাপা দেওয়ার অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।

অামরা দাবি করি (১) নন্দীগ্রাম গণহত্যা নিয়ে সি বি অাই-এর অসত্য, উদ্দেশ্য প্রণোদিত, বিকৃত রিপোর্ট বাতিল করতে হবে। (২) নন্দীগ্রাম ও সিঙ্গুরের অান্দোলনকারীদের ওপর থেকে সমস্ত সাজানো ও মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করতে হবে। (৩) নন্দীগ্রাম হত্যা ও গণহত্যায় অভিযুক্ত পুলিশ অাধিকারিক, প্রশাসনের কর্তাব্যক্তি ও তৎকালীন শাসক দলের নেতৃবৃন্দের কঠোর শাস্তি চাই। (৪) নন্দীগ্রাম ও নেতাই গণহত্যার বিচার বিভাগীয় তদন্ত করতে হবে। কোনো অজুহাতেই নন্দীগ্রাম গণহত্যায় যুক্ত অপরাধী পুলিশ অফিশার ও দলীয় নেতৃবৃন্দের শাস্তিকে অাড়াল করা যাবে না। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর কাছে অামাদের দাবি নন্দীগ্রাম হত্যা ও গণহত্যায় যুক্ত অপরাধীদের শাস্তি দিতে হবে।

২। টেট কেলেঙ্কারির জন্য শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুকে পদত্যাগ করতে হবে।

শিক্ষাক্ষেত্রে নৈরাজ্য, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতি, উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা পর্ষদ, প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের বশংবদ অাধিকারিকদের ঘনঘন পদত্যাগ ও শিক্ষাক্ষেত্রে দলতন্ত্রের কব্জা তৃণমূল সরকারের অবদান। ৪০ লক্ষ কর্মপ্রার্থী শিক্ষকের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলা এবং ব্যাপক অার্থিক দুর্নীতি টেট কেলেঙ্কারি হিসাবে পরিচিত হয়েছে। ব্রিগেডের সভায় মুখ্যমন্ত্রী দুর্নীতির বিরুদ্ধে বহু হুঙ্কার দিলেন, অথচ তারই দলের নেতা-নেত্রী ও শিক্ষা জগতের অামলারা টেট কেলেঙ্কারিতে অভিযুক্ত। এই কেলেঙ্কারির দায় নিয়ে রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রীর অবিলম্বে পদত্যাগ করা উচিত। অাগামী ৬ ফেব্রুয়ারী ২০১৪ অামাদের ছাত্র সংগঠন এ অাই এস এ ভুক্তভোগী ছাত্র ও কর্মপ্রার্থীদের নিয়ে প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের সল্টলেক কেন্দ্রে বিক্ষোভ প্রদর্শন করবে।

Back-to-previous-article
Top