এআইপিএফ তথ্য অনুসন্ধানকারী টীমের বস্তার পরিদর্শন

ভুয়ো সংঘর্ষ, ধর্ষণ, অবাধ গ্রেপ্তারী, ভুয়ো আত্মসমর্পণের বহু ঘটনার সত্য উদঘাটন


রায়পুর ১২ জুন ২০১৬ : অল ইন্ডিয়া পিপলস ফোরামের তথ্য অনুসন্ধানকারী আট জনের একটি টীম ছত্তিশগড়ের বস্তার জেলায় ৮-১১ জুন ২০১৬ পরিদর্শন করেন। তাঁদের অনুসন্ধানে পাওয়া গেছে খ্রীস্টান সংখ্যালঘুদের ওপর কয়েকটি সাম্প্রদায়িক হিংসার ঘটনা এবং বহু ভুয়ো সংঘর্ষ, ধর্ষণ, ভুয়ো মামলা, অবাধ গ্রেপ্তারী ও ভুয়ো আত্মসমর্পণের ঘটনা। এআইপিএফ টীমে ছিলেন মধ্যপ্রদেশের সমাজবাদী সমাগমের প্রাক্তন বিধায়ক ডঃ সুনিলম, সিপিআই(এমএল)-এর কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও ঝাড়খণ্ডের প্রাক্তন বিধায়ক বিনোদ সিং, অল ইন্ডিয়া প্রগতিশীল মহিলা সমিতির সম্পাদিকা কবিতা কৃষ্ণাণ, এআইসিসিটিইউ-র ব্রিজেন্দ্র তেওয়ারী, পিইউসিএল-এর পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সম্পাদক অম্লান ভট্টাচার্য, ছিন্দওয়ারার আইনজীবী আরাধনা ভার্গব, কলকাতার আইনজীবী অজয় দত্ত এবং অমলেন্দু ভূষণ চৌধুরী।

খ্রীস্টান সংখ্যালঘুদের ওপর সাম্প্রদায়িক হিংসা

১। করমারি, বড়ে থেগলি, সিরিসগুড়া এবং বেলার বস্তার জেলার এই কয়েকটি গ্রামের গ্রাম সভা, ‘ছত্তিশগড় গ্রাম পঞ্চায়েত আইনে’র ১২৯ (জি) ধারার ভুল ব্যাখ্যা এবং আইন লঙ্ঘন করে অ-হিন্দুবাসীদের বসবাস, উপাসনাগৃহ নির্মাণ বন্ধ করার প্রস্তাব চাপিয়ে দেয়। যদিও করমারি ও সিরিসগুড়া গ্রাম সভার এই প্রস্তাব হাইকোর্ট নাকচ করে দেন।

২। বস্তার জেলার ভাদিমগাঁও (টোকাপাল পঞ্চায়েত)-এর যাজক পিলারাম কাওড়েকে তাঁর নিজের জমিতে উপাসনাগৃহ নির্মাণের অনুমতি নাকচ করে তাঁকে লিখিত নোটিশ দেওয়া হয়। ঐ নোটিশে বলা হয় ছত্তিশগড় গ্রাম পঞ্চায়েত আইন ১৯৯৩-এর ধারা ৫৫(১) এবং (২) মোতাবেক তিনি কোন উপাসনাগৃহ নির্মাণ করতে পারবেন না এবং আরও বলা হয় যে “কারণ ঐ গ্রামে বড় বড় জাতের ও ধর্মের লোক বসবাস করেন এবং প্রত্যেক দশেরার সময় উৎসবে স্বয়ং রূপশীলা দেবী মা যোগ দেন সেখানে।”

৩। খ্রীষ্টানদের কবরস্থান ব্যবহার করার ক্ষেত্রেও বাধা দেওয়া চলছে। ঐ ভাদিসগাঁওয়ে এক খ্রিষ্টান বৃদ্ধা সারদি বাঈ ২৫ মে ২০১৬ মারা যান। কিন্তু বজরং দলের প্ররোচনায় হিন্দু গ্রামবাসীরা তাঁকে কবর দিতে বাধা প্রদান করেন। শেষে পুলিশের মধ্যস্থতায় মৃতাকে ক্রুশ ছাড়াই বাক্সে করে কবর দেওয়া হয়। অবশ্য ঐ হিন্দু গ্রামবাসীরা খ্রিষ্টানদের সতর্ক করে যায় যে, আর কোনো খ্রীষ্টানকে কবর দেওয়া যাবে না। অতঃপর ঐ গ্রামের ২০০ খ্রিষ্টান পরিবার এসডিএম তহশিলদার, পুলিশ ও সরপঞ্চকে আবেদন করেন খ্রীষ্টানদের জন্য পৃথক কবরস্থানের ব্যবস্থা করার, কারণ তাঁরা সাধারণ গোরস্থান ব্যবহার করতে বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছেন।

৪। ৬ জুন ২০১৬ সারদি বাঈ-এর স্বামী সুখদেব নেতম মারা গেলেন এবং হিন্দু গ্রামবাসীরা খ্রীষ্টান গ্রামবাসীদের তাঁর শেষকৃত্য পালন ও কবর দেওয়ায় বাধা দিলেন ও হুমকি দিয়ে বললেন যে, যদি তাঁরা কবর দেওয়ার চেষ্টা করেন তাহলে তাঁদের হত্যা করা হবে। এরপর আবার পুলিশের মাধ্যমে কবর দেওয়া হয় এবং সরপঞ্চ ও গ্রামবাসীরা হুমকি দেয় ভবিষ্যতে তারা বজরং দলকে ডাকবে যদি খ্রীষ্টানরা কবরস্থান ব্যবহার করার চেষ্টা করেন।

৫। অম্বিকাপুর জেলায় জেপুর থানার বারিয়ো চৌকির আরা গ্রামে ৫ জুন ২০১৬ রবিবার বজরং দলের ২৫ জনের বাহিনী, যার নেতৃত্বে ছিল ছোট্টু জয়সোয়াল, সোনু গুপ্তা, বিপিন গুপ্তা, ছোটু গুপ্তা ও অন্যান্যরা, একটি গীর্জায় প্রার্থনার সময় হামলা চালায়। তারা গীর্জায় ভাঙচুর করে, যাজককে ও তাঁর স্ত্রী সহ অন্যান্য তিনজনকে মারধোর করে। তারা এই ঘটনার ভিডিও ছবি তোলে ও সেটি ছড়িয়ে পড়ে নানাদিকে। টীমের কাছে তার কপিও আছে। যাজক ও তাঁর স্ত্রী সহ অন্যান্য তিনজনকে বারিয়ো চৌকিতে টেনে নিয়ে আসে এবং রাত পর্যন্ত আটকে রাখে। কোন‍ো এফ আই আর দুষ্কৃতিদের বিরুদ্ধে হয়নি। উল্টে ঐ যাজকের বিরুদ্ধে ২৯৫এ ধারায় মামলা দায়ের হয় এবং তিনি এখনও পর্যন্ত কোনো জামিন পাননি।

৬ । সিরিসগুড়া গ্রামে খ্রীষ্টানদের রেশন বন্ধ করা হয়েছে, খাদ্য দপ্তরের কর্মকর্তাদের ও খ্রীষ্টানদের পেটানো হয়েছে, গ্রামে অ্যাম্বুলেন্স ধুকতে দেওয়া হয়নি, আহত খ্রীষ্টানদের জেলা হাসপাতালে চিকিৎসা বন্ধ করা হয়েছে। বহু চেষ্টার পর একটি মামলা রুজু করা হয়েছে কিন্তু আহতদের জবানবন্দি আদালতে এখনও পাঠানো হয়নি। বিশ্ব হিন্দু পরিষদ ও বজরং দলের বাধায় খ্রীষ্টানদের গ্রামে পাম্পের জলের সুবিধা বন্ধ করা হয়েছে। জেলাশাসকের আহুত একটি মিটিংয়ে ভিএইচপি, বজরং দল বলে যে, খ্রীষ্টানরা যদি ‘ঘর ওয়াপসি’ (ধর্মান্তরকরণ)-তে সম্মত না হয় তাহলে তাদের পঞ্চায়েত আইনের ১২৯(জি) ধারা লাগু করে গ্রাম থেকে উচ্ছেদ করা হবে।

রাওঘাট মাইনসের অরণ্যের অধিকারকে লঙ্ঘন করার জন্য প্রতিরোধী গ্রামবাসীদের উপর অত্যাচার ও ভীতি প্রদর্শন

১। কাঁকের জেলার আন্তাহগড় থানার কোহচি গ্রামের রাজকুমার দাররো বললেন, রাওঘাট মাইনসের জন্য ২৫ হেক্টর জমি, গ্রামবাসীদের, গ্রাম পঞ্চায়েতের, বা গ্রাম সভাকে কোনো কিছু না জানিয়ে অধিগ্রহণ করা হয়েছে। (সরকারিভাবে রাওঘাট মাইনস ও তৎসংলগ্ন বাঁধ এবং রেলওয়ে লাইন ভিলাই ইস্পাত কারখানার কিন্তু বিভিন্ন বেসরকারি কোম্পানির একটি গোষ্ঠী এই মাইনিং প্রকল্পের সাথে যুক্ত হবে)। যথেচ্ছ গাছ কাটা হচ্ছে, ৫০ বছর ধরে আদিবাসীদের ভোগ করে আসা বনাঞ্চলের দখল নেওয়া হচ্ছে, আদিবাসীদের উপাসনার বহু জায়গা ধ্বংস করা হচ্ছে, এমনকি তাদের কবর দেওয়ার নির্দিষ্ট জায়গাগুলোও কোম্পানিরা দখল করছে। ঐ এলাকায় প্রতি কিলোমিটারে সি আর পি এফ ক্যাম্প তৈরি হয়েছে। মে মাসে অন্য একটি তথ্য অনুসন্ধানী দলের কাছে মুখ খোলার জন্য রামকুমার ভারো নামক জনৈক ব্যাক্তিকে একজন এসডিওপি মাওবাদী অভিযোগে জেলে বন্দি করার হুমকি দিয়েছেন।

২। দুকরা সিং-এর কন্যাকে একজন এসপিও ধর্ষণ করে ফলে কন্যাটির একটি সন্তানও হয়। কোনো মামলাই দায়ের করা যায়নি। ঐ এসপিও ৫০ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ দেব বলে মাত্র ২৫ হাজার টাকা দিয়েছে।

ভুয়ো সংঘর্ষ

১। নাগলগুড়া, থানা গড়িরাস, তেহসিল কুয়াকোন্ডা জেলা দান্তেওয়াড়াঃ চারজন মহিলা — রামে, পান্ডি, সুন্নো এবং মাসে ২১ নভেম্বর ২০১৫ ভুয়ো সংঘর্ষে নিহত হন। বদ্রু নামে একজন প্রাক্তন মাওবাদী আত্মসমর্পণ করার পর ‘প্রধান আরক্ষক’ হয় ও ঐ হত্যাকারী বাহিনীর দলে যোগ দেয় এবং মাসেকে হত্যা করার আগে ধর্ষণ করে। ২২ জন ডি আর জি জওয়ানকে এই সংঘর্ষের জন্য পদোন্নতি করা হয় এবং পুরস্কার প্রদান করা হয়। অথচ জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের নির্দেশ অনুযায়ী সংঘর্ষের জন্য পুরস্কার দেওয়া নিয়ম বিরুদ্ধ, এবং সুপ্রীম কোর্টের নির্দেশকেও তা লঙ্ঘন করে।

২। সুকমা জেলার দোরনাপাল তেহশিল, গ্রাম আরলামপল্লিঃ গ্রামবাসীরা তদন্তকারী টীমকে বললেন, ৩ নভেম্বর ২০১৫ তিনটি যুবককে — দুধি ভীমা (২৩ বছর), সোধি মুয়া (২১ বছর) এবং ভেট্টি লাকছু (১৯ বছর) পুলিশ হত্যা করে। দুটি সাইকেল করে তারা ভোরবেলায় তাড়ি আনতে যায়। এরপর তারা পেলামপল্লি বাজারে যায় যেখানে ভীমার মা তাদের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। গ্রামের কাছেই ‘নালা’-তে সাইকেল থেকে নেমে পড়ে ভেট্টি লাকছু এবং অন্য দুজন এগিয়ে যায়। নিরাপত্তা কর্মীরা কাছেই চিরুনি তল্লাশি চালাচ্ছিলেন এবং ঐ দুই যুবককে মারধর করে। ভেট্টি লাকছু তাই দেখে দৌড়ে পালাতে যায় এবং পুলিশ তাকে গুলি করে হত্যা করে। সঙ্গী দু’জন যুবক ভেট্টির লাশ পেলামপল্লি থানায় বয়ে নিয়ে আসার পথে পুলিশ তাদেরও গুলি করে হত্যা করে। কোনো এফ আই আর এক্ষেত্রে নথিভুক্ত করা হয়নি।

৩। পালামাগড়ু, তেহশিল দোরনাপাল, জেলা সুকমাঃ পুলিশের বয়ান অনুযায়ী ৩১ জানুয়ারি ২০১৬ প্রায় একঘণ্টার গুলি বিনিময়ের পর দু’জন মহিলা মাওবাদী নিহত হন। স্থানীয় সংবাদপত্রে প্রকাশিত পুলিশের বয়ান অনুযায়ী ঐ দু’জন নকশালপন্থী মহিলা শাড়ি পড়ে ছিলেন বলে দৌড়ে পালাতে পারেননি এবং তার জন্য তাঁরা একটি গর্তে পড়ে যান ও নিহত হন। অনুসন্ধানী টীম জানতে পারেন যে, প্রকৃতপক্ষে দু’জন বালিকাকে পুলিশ ঠাণ্ডামাথায় হত্যা করেছে। সিরিয়াম পুঞ্জে (১৪ বছর)-র মা বলেন যে তাঁর কন্যা মানজম শান্তি (১৩ বছর)-র সঙ্গে মুরগিদের চরাতে নিয়ে গিয়েছিল এবং নদীতে স্নান করতে যাওয়ার পথে পুলিশ তাদের গুলি করে হত্যা করে। মানজম শান্তির বাবা বলেন, ওরা দু’জনেই গ্রামে বাস করত এবং মাওবাদীদের সঙ্গে তাদের কোনো সম্পর্ক ছিল না।

৪। বিজাপুর জেলার কাদেনার গ্রামঃ পুলিশের বয়ান অনুযায়ী ২১ মে ২০১৬, ৩০-৩৫ জন সশস্ত্র মাওবাদীর সাথে তাদের সংঘর্ষ হয় এবং এক দম্পতি — মনোজ হাপকা ও তাঁর স্ত্রী পান্দী হাপকা/পান্দী তাঁতি নিহত হন। ঐ গ্রামে পান্দী হাপকার মা এবং ভাই টীমকে বলেন, রাত্রি ৮টার সময় যখন রাতের খাওয়া দাওয়া হচ্ছিল সেই সময় পুলিশ বাড়িতে আসে। তারা মনোজ এবং পান্দীকে তাদের জামা কাপড় ও অন্যান্য জিনিসপত্রের সঙ্গে ১৩ হাজার টাকা — যেটা তারা অন্ধ্রে লঙ্কা চাষ করে রোজগার করেছিল — সব নিয়ে যায়। মনোজ ও পান্দী একবছরের জন্য মাওবাদী ছিল কিন্তু তা পাঁচ বছর আগে, বর্তমানে তারা মাওবাদী দল ছেড়ে গ্রামে ফিরে চাষবাস করছিল। পান্দী যক্ষ্মা রোগে ৫ বছর ধরে আক্রান্ত এবং খুব অসুস্থ ছিল।

ভুয়ো মামলা এবং যথেচ্ছ গ্রেপ্তার

সুকমা জেলার গড়িরাস থানা, পান্ডিয়া গ্রামে ২১ মে ২০১৬ সকাল ৯টার সময় ২০০-৩০০ জনের পুলিশ বাহিনী এসে গ্রামের একটা জলাভূমিতে কর্মরত গ্রামবাসীদের গ্রেপ্তার করে। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ হিসাবে পুলিশ বলে — তারা নাকি এসারের পাইপ লাইন ১৯ মে ২০১৬-তে ভেঙ্গে ফেলেছে। ১১ জন আদিবাসীর মধ্যে ২ জনকে ছেড়ে দিয়ে ৮ জনকে জেলে নিয়ে যায় পুলিশ। প্রতিবেদকদের টীম পৌঁছানোর আগের রাত্রে পুলিশ ঐ গ্রামের সরপঞ্চ মাদকম হাদমাকে পুলিশের উর্দি পরিয়ে তাদের সাথে নিয়ে ঐ গ্রাম থেকে ৪ জনকে গ্রেপ্তার করে। এইভাবে ঐ সরপঞ্চকে পুলিশের এজেন্ট সাজিয়ে তাঁকে মাওবাদীদের আক্রমণের টার্গেট করে তোলে।

ঐ একই গ্রামে ১২ বছরের ছেলে যোগাকে ১২ মে পুলিশ গ্রেপ্তার করে। টীম পরে জানতে পারে যে যোগার বাবা ও ভাইদেরও পুলিশ থানায় সাতদিন ধরে আটকে রেখেছে এবং তাদের দিয়ে থানার বাসন ধোয়া ও অন্যান্য সাফাইয়ের কাজ করানো হচ্ছে। পরে তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়। টীম পৌঁছানোর আগের রাত্রে যোগার বাবাকে এবং অন্য তিনজনকে থানার হেফাজতে নেওয়া হয়। গড়িরাম থানার এসএইচও বললেন, যোগার বোন একজন মাওবাদী ‘মহিলা কমান্ডার’ তাই বারংবার গ্রেপ্তার করা হচ্ছে ওদের। কিন্তু প্রায় ১৫০ জন গ্রামবাসী বলেন যে এটা সত্যি নয় এবং ওর বোন গ্রামেই বাস করে। টীম যোগার বোনের নিরাপত্তার জন্য আশঙ্কা প্রকাশ করেছে যে তাকেও হয়ত মাওবাদী নাম দিয়ে ভুয়ো সংঘর্ষে হত্যা করা হবে। সরপঞ্চও আতঙ্কের মধ্যে রয়েছেন যে তাকেও হয়ত হত্যা করা হবে।

নাবালিকাকে সিআরপিএফের ধর্ষণ

দান্তেওয়াড়া থানার পোদুম গ্রামে ১৪ বছরের বালিকাকে ৮ জুন ২০১৬ তাঁর দোকান বন্ধ করার সময় একজন সিআরপিএফ জওয়ান ধরে এবং ঐ দোকানের মধ্যে সারারাত ধরে ধর্ষণ করে। সে তার জামাইবাবুকে ঘটনাটি জানায় এবং তিনি থানায় অভিযোগ নথিবদ্ধ করেন। পরে বালিকাটির ডাক্তারি পরীক্ষা হয় ১১ জুন ২০১৬। এটি সম্ভব হয় সোনি সোরি ও প্রতিবেদক টীমের হস্তক্ষেপের ফলে। সি আর পি এফ জওয়ানটি তার নাম জানায় আর আর নেতম — তার সার্ভিস নম্বরও জানায় — কিন্ত পরে দেখা যায় ঐ নাম ও নম্বর ভুয়ো।

ভুয়ো আত্মসমর্পণ

টীম চিন্তলনার গ্রামে পরিদর্শনে জানতে পারেন ৫০টি আত্মসমর্পণের ঘটনা। একজন ছোট ব্যবসায়ী বলেন তাকে পোলামপল্লি থানায় একজন এসপিও ডেকে পাঠায় এবং জানায় যে তার নামে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা আছে। সেখানে গেলে তাকে ও অন্যান্য ২৫ জনকে বলা হয় যে হয় তারা আত্মসমর্পণ করুক নতুবা তাদের নামে ২ বছর আগে নিহত এসপিও নাগেশের হত্যার মামলায় অভিযুক্ত করা হবে। ঐ ব্যবসায়ীর বয়স ৫৫ বছর এবং তিনি বলেন অন্যান্য ২৫টি আত্মসমর্পণের ঘটনাও সত্যি নয়। তাদের প্রত্যেককে ঘটনাস্থলেই দশ হাজার টাকা করে দেওয়া হয়। অন্যান্য অনেকেই ভুয়ো আত্মসমর্পণের কথা বলেন। তারা প্রত্যেকেই মাওবাদীদের প্রত্যাঘাতের আশঙ্কাও করছেন।

গ্রামের পরিস্থিতি

এআইপিএফের দুটি টীম ১৬৫০ কিলোমিটার পরিদর্শন করেন। তাঁদের ৬০টির বেশি পুলিশ এবং সিআরপিএফ ক্যাম্পের সম্মুখীন হতে হয়েছে। যে ২৫টি গ্রামে তাঁরা গিয়েছেন সেখানে নজরে পড়েছে যে, সেখানের গ্রামবাসীরা নিরাপত্তাহিনতা ও একে অন্যের প্রতি সন্দেহপ্রবণতায় ভুগছেন। এই চারটি জেলায় রাজনৈতিক দল ও অন্যান্য সংগঠন প্রায় নিস্ক্রিয় এবং তারা বলেছেন এখানে গণতন্ত্রের সুযোগ সঙ্কুচিত। বেশিরভাগ গ্রামেই বিদ্যুৎ, রাস্তা নেই, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের সুযোগ নেই। কেতুলনার গ্রামে অঙ্গনওয়াড়ির দেওয়া দুধ খেয়ে দুটি শিশুকন্যা মারা যায়। টীমের পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, ঐ গ্রামে ৮ জন মিতানিন রয়েছে যাদের কাছে পেটের রোগের ও বমির চিকিৎসার কোনো ওষুধ নেই। হাসপাতাল ১০ কিলোমিটার দূরে এবং এই কারণে ঐ শিশুকন্যা দুটি মারা যায়। এই ঘটনার পর ওষুধ সরবরাহ করা হয়েছে কিন্তু ঐ দুধ যোগানদারের বিরুদ্ধে দণ্ডনীয় নরহত্যার মামলা এখনও রুজু করা হয়নি।

Back-to-previous-article
Top