কোনো শব্দ বা বাক্য দিয়েই তাঁর পরিচয়কে সম্পূর্ণ তুলে ধরা যায় না। অাজীবন সংগ্রামী, বিপ্লবী অান্দোলনের অগ্রণী সৈনিক সকলের প্রিয় কমরেড রাজর্ষি দাশগুপ্ত ৭ ফেব্রুয়ারী ২০১৫, সকাল ৮-০৫ মিনিটে অামাদের ছেড়ে চলে গেছেন। ১৯৫০ সালের ১৬ অাগস্ট তিনি জন্মগ্রহণ করেন। কমিউনিস্ট অাদর্শ ও অফুরন্ত প্রাণশক্তির ধারক রাজর্ষি দাশগুপ্ত জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে সত্যের প্রতি অবিচল ছিলেন। সততা, পরোপকার, নিয়মানুবর্তিতা, পরিবার-সমাজ ও বন্ধুদের প্রতি দায়বদ্ধতা তাঁর জীবনের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিল।
কলকাতার হিন্দু স্কুল থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করার পর সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজে ভর্তি হন। কলেজ জীবনে বিপ্লবী রাজনীতির মতাদর্শে যুক্ত থাকার জন্য কর্তৃপক্ষের রোষানলে পড়েন ও বিতাড়িত হন। পরে তিনি অাশুতোষ কলেজ থেকে সান্মানিক স্নাতক হন। কর্মজীবনে তিনি প্রথমে রাজ্য সরকারের ভূমি ও ভূমিরাজস্ব দপ্তরে পুরুলিয়ায় এলঅারও হিসাবে যোগ দেন, তারপর এগ্রিকালচারাল বিভাগে ইন্সপেক্টর হন। পরবর্তীতে ১৯৭৬ সালে কেন্দ্রীয় সরকাররের ইনকাম ট্যাক্স বিভাগে অফিসার পদে যোগ দেন এবং জয়েন্ট কমিশনার হিসাবে চাকরির মেয়াদ শেষ করেন। পিতা শশাঙ্কভূষণ ও মা শেফালি দাশগুপ্তের সুযোগ্য সন্তান মৃত্যুকালে রেখে গেলেন স্ত্রী সর্বাণী দাশগুপ্ত ও একমাত্র কন্যা হৈমন্তিকা সহ অগণিত বন্ধু, সহযোদ্ধা ও গুণমুগ্ধকে।
কর্মজীবনে পেশার পাশাপাশি অায়কর দপ্তরের সমস্ত স্তরের অফিসার ও কর্মচারির সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে। তিনি জয়েন্ট কাউন্সিল অফ এ্যাকশন অফ ইনকাম ট্যাক্স-এর পশ্চিমবঙ্গ শাখার যুগ্ম অাহ্বায়ক ছিলেন। সর্বভারতীয় স্তরেও তিনি অল ইন্ডিয়া ইনকাম ট্যাক্স গেজেটেড অফিসার্স এ্যাসোসিয়েশনের সেক্রেটারি জেনারেল-এর দায়িত্ব পালন করেন এবং কেন্দ্রীয় সরকারী কর্মচারি অান্দোলের যৌথ মঞ্চ (জেসিএ)-র সর্বভারতীয় নেতৃত্বে ছিলেন। কর্মজীবনের পাশাপাশি সমাজ পরিবর্তনের রাজনীতিতে সম্পৃক্ত কমরেড রাজর্ষি সি পি অাই (এম এল) লিবারেশনের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কমিটির গুরুত্বপূর্ণ সদস্য ছিলেন। সমাজ জীবন ও অর্থনৈতিক গতিপ্রকৃতির একনিষ্ঠ বিশ্লেষক রাজর্ষি পার্টির মুখপত্র দেশব্রতীর সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য ছিলেন। পার্টির কেন্দ্রীয় মুখপত্র লিবারেশন ও দেশব্রতীর তিনি একজন নিয়মিত লেখক ও প্রবন্ধকার ছিলেন। গ্রাম ও শহরের নিপীড়িত শ্রমজীবী জনগণের কাছে সমাজের গতিপ্রকৃতি ও বিপ্লবী অান্দোলনের বার্তা পৌঁছে দেওয়ার কাজে তিনি ছিলেন অকৃপণ। তাঁর লেখনী প্রতিমুহূর্তে কর্মীবাহিনীকে সমৃদ্ধ করত। শ্রমিক অান্দোলনের একনিষ্ঠ সংগঠক কমরেড রাজর্ষি দাশগুপ্ত রাজ্য ওয়ার্কিং ক্লাস ডিপার্টমেন্ট ও পার্টির কলকাতা জেলা কমিটিরও সদস্য ছিলেন। যে রোগ তাঁকে অামদের কাছ থেকে ছিনিয়ে নিল সেই ক্যান্সারে অক্রান্ত মানুষদের চিকিৎসা ও সব রকম সহযোগিতার জন্য গঠিত এক সংস্থার তিনি ছিলেন সক্রিয় সদস্য। মৃত্যুর পরেও তাঁর মরদেহ চিকিৎসা বিজ্ঞানের অগ্রগতির স্বার্থে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে দান করা হয়েছে।
তাঁর প্রয়াণ অামাদের রিক্ত করে গেল। তাঁর অপূর্ণ বিপ্লবী অাকাঙ্খাকে সফল করার দায়িত্ব রেখে গেলেন অগণিত কর্মী-সমর্থক-দরদীর কাঁধে। তাঁর মহতি অাকাঙ্খাকে সফল করার জন্য অামরা জীবনের শেষদিন পর্যন্ত অবিচল থাকব।
কমরেড রাজর্ষি দাশগুপ্ত লাল সেলাম। কমরেড রাজর্ষি দাশগুপ্ত অমর রহে।