সি পি অাই (এম এল)-এর ডাকে ২১ জানুয়ারী শহীদ মিনারে ”জবাব চাই সমাবেশ” সফল করার অাবেদন : স্বৈরাচার ও স্বেচ্ছাচারের বিরুদ্ধে বাম-গণতান্ত্রিক অান্দোলন শক্তিশালী করুন

অামাদের এই দেশ ও এই রাজ্য ইন্দিরা-সিদ্ধার্থের স্বৈরশাসন ও গণতন্ত্রহত্যার রাজনীতি প্রত্যক্ষ করেছে। গোটা দেশজুড়ে ‘এশিয়ার মুক্তি সূর্যের’ জয়ধ্বনি তুলে অার বন্দেমাতরম শ্লোগান দিতে দিতে সংগঠিত হয়েছিল হত্যা-গণহত্যার বর্বর রাজনীতি। হত্যা করা হয়েছিল সমাজ বদলের স্বপ্ন দেখা একটা গোটা প্রজন্মকে, বিপ্লবী নেতা-কর্মীদের পাশাপাশি অসংখ্য সংগ্রামী বামপন্থী সংগঠককে। শাসকের সংকট মোচনে জারি করা হয়েছিল গণতন্ত্র হত্যার কালো ফতোয়া – জরুরি অবস্থা। সেই কালো ইতিহাসের বিচার এখনও বাকি।

অাজ অাবার দেশজুড়ে শুরু হয়েছে কর্পোরেট-সাম্প্রদায়িক জমানাকে স্থায়ী করার দুরভিসন্ধি। ‘সুদিন’ অানার ধোঁকাবাজি ধরা পড়ে যাওয়ার পর শুরু হল সাম্প্রদায়িক অসহিষ্ণুতার বিষবাষ্পে সমাজ ও দেশকে বিভাজিত করার ঘৃণ্য রাজনীতি। দরিদ্র ভারতবাসীকে স্বপ্ন দেখানো হচ্ছে ‘ডিজিটাল ইন্ডিয়ার’। স্বাস্থ্য, শিক্ষা, কাজ ও খাদ্য থেকে বঞ্চিত মানুষকে প্রতারণার এই রাজনীতির বিরুদ্ধে দেশ ও সমাজ অালোড়িত ও অান্দোলিত। শ্রমজীবী জনগণের গণতন্ত্র হরণের জন্য জারি হচ্ছে একের পর এক কালা ফরমান, পুঁজিপতিদের স্বার্থে উজাড় করে দেওয়া হচ্ছে জল-জমি-জঙ্গল সহ দেশের সমস্ত প্রাকৃতিক ও রাষ্ট্রীয় সম্পদ। এত করেও বিজেপি-ফানুস চুপসে গেছে, তাই নতুন করে উগ্রজাতীয়তাবাদী যুদ্ধজিগির তৈরির ঘৃণ্য চেষ্টা চলছে। পাকিস্তান বিরোধী, মুসলমান বিরোধী উগ্র জাতীয়তাবাদ শাসকের পরিচিত রাজনীতি। বামপন্থী-গণতান্ত্রিক জনগণকে এর বিরুদ্ধে অাওয়াজ তুলতে হবে।

পাঁচ বছর অাগে ‘সততার প্রতীক’ কাট-অাউট টাঙিয়ে অার পরিবর্তনের ধূয়ো তুলে এরাজ্যে ক্ষমতায় এসেছিল যারা, তারা অাজ অাকণ্ঠ দুর্নীতিতে ডুবে অাছে। মনমোহনীয় কংগ্রেসী জমানার মতো অাজ একে, কাল ওকে সিবিঅাই ডেকে পাঠাচ্ছে। কেউ জামিন পাচ্ছে তো অন্যজন জেলে ঢুকছে বা ঢোকার অপেক্ষায় প্রহর গুণছে। যে হাজারো প্রতিশ্রুতি ছিল লাখো লাখো বেকার যুবক ও শ্রমজীবী জনগণের জন্য, তার কি হল? মেলা-খেলা, উৎসব-মোচ্ছব অার পারিতোষিক বিতরণেই কোষাগার ফাঁকা। একটাও বন্ধ কারখানা খোলেনি। এক ছটাক খাস ও উদ্বৃত্ত জমি ভূমিহীন কৃষক বা ক্ষেতমজুরদের মধ্যে বিলি করা হয়নি। সংখ্যালঘু ও অাদিবাসী জনগণ যে তিমিরে ছিলেন, তার থেকেও গাঢ় অন্ধকারে চলে গেছেন। একশো শতাংশ কাজ শেষ করে ফেলার ধোঁকাবাজি ধরা পড়ে যাওয়ার পর মন্দির-মসজিদ-গীর্জায় দৌড়চ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী ও তাঁর স্যাঙাতরা। কর্মসংস্থানের একমাত্র পথ হয়ে দাঁড়িয়েছে তোলাবাজি, সিন্ডিকেটরাজ ও জমির ফাটকা কারবার। নারীর স্বাধীনতা ও অধিকার ভূলুণ্ঠিত হলেও মুখ্যমন্ত্রী নির্বিকার। সবই ‘সাজানো ঘটনা’ বলে তাঁর মনে হয়। একবিংশ শতাব্দীতেও এরাজ্যে অসংখ্য অাদিবাসী চা-শ্রমিক শুধু খাদ্যের অভাবে মারা যাচ্ছেন। ডিজিটাল রেশন কার্ড ও খাদ্য সুরক্ষা প্রকল্প তামাশায় পর্যবসিত। এই বাংলা ‘৪৩-এর মন্বন্তর দেখেছে, গোটা কলকাতায় ”ফ্যান চাই, ফ্যান দাও গো” – নিরন্ন মানুষের সেই মর্মবিদারী অার্তি কলকাতা শুনেছে। অাজ চা-বাগানের বস্তিগুলোতে কিংবা বন্ধ কলকারখানার মহল্লাগুলোতে কান পাতলেই সেই অার্তি শুনতে পাবেন। দিন অানি দিন খাই নির্মাণ শ্রমিক, ভূমিহীন কৃষিমজুর পাড়াগুলোতে সেই একই ছবি। অথচ মুখ্যমন্ত্রী বলে চলেছেন ‘তাঁরা পরবর্তী মন্ত্রীসভা গঠন নিয়ে অালোচনা শুরু করেছেন’। জবাব দেওয়ার কোনো দায় নেই। সিঙ্গুরের অনিচ্ছুক কৃষকের জমি ফেরানোর কি হল? নন্দীগ্রাম গণহত্যায় কার কার শাস্তি হল? কোনো জবাব নেই। এভাবেই কাশীপুর-বরানগরের গণহত্যার বিচার হয়নি, এভাবেই নন্দীগ্রাম গণহত্যার কথা মানুষ ভুলে যাবে !

রাজ্যজুড়ে সমাজ জীবনে অাত্মত্যাগী সেই যুবক-যুবতীরা কি হারিয়ে গেছে, যারা ইতিহাসের সমস্ত কঠিন সন্ধিক্ষণে শ্রমজীবী জনগণের অধিকার ও গণতন্ত্রের জন্য নিজেদের উৎসর্গ করেছে? তা হতে পারে না। গোটা বাংলাকে অাজ গণতন্ত্রের দাবিতে মুখর হতে হবে। প্রতারকদের বিরুদ্ধে অাবার পথে নামতে হবে। ইতিহাসে বারবার এটা দেখা গেছে সমস্ত কঠিন ও জটিল প্রশ্নের নিষ্পত্তি রাস্তাতেই হয়েছে, হাল অামলের সিঙ্গুর-নন্দীগ্রাম তার জ্বলন্ত প্রমাণ।
ক্ষমতা কেন্দ্রীক বামপন্থা এ পথে হাঁটতে রাজি নয়। ছলে-বলে-কৌশলে, নীতি-অাদর্শ বিসর্জন দিয়ে তারা ক্ষমতায় ফিরতে চায়। এ পথে বামপন্থাকে বাঁচানো যায় না, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার হয় না। এক শাসক যায়, অন্য শাসক অাসে। রং বদলায়, দিন বদলায় না।

বাম-গণতান্ত্রিক শক্তি ও সংগঠনগুলোকে তাই বিকল্প পথে হাঁটতে হবে। জনগণের অধিকার ও গণতন্ত্রের জন্য গণঅান্দোলন, শ্রেণী-অান্দোলনকে শক্তিশালী করার জন্য জান লড়িয়ে দিতে হবে। বাংলা সেই নতুন দিনের জন্য অাবার পথে নেমেছে। সেই মহতী অাকাঙ্খাকে বাস্তবায়িত করার জন্য ২১ জানুয়ারী ২০১৬ শহীদ মিনার সমাবেশ। লালঝাণ্ডা হাতে গ্রাম ও শহর জবাব চাইবে শাসকের কাছে। অাপনিও অাসুন, স্বজন-পরিজন-বন্ধুদের নিয়ে, অাপনার অধীর প্রতীক্ষায় অামরা অপেক্ষা করব। প্রমাণ করে দিতে হবে অামাদের মেরুদণ্ডকে অামরা বাঁকিয়ে ফেলিনি, অামরা হার মানতে রাজি নই, অামরা জবাব চাই।

— পার্থ ঘোষ

রাজ্য সম্পাদক

সি পি অাই (এম এল) লিবারেশন
21 Jan 2016

Back-to-previous-article
Top